
তাওহীদুল ইসলাম রাপীঃ
কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিন ধরে। এ অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রাণের দাবি উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে নিতে এই পর্যটন নগরীতে হোক একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এ নিয়ে বিগত সরকারের আমলে ২০২৩ সালের ৪ঠা অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক কক্সবাজারে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হলেও, পরবর্তীতে এর কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। এতে করে জেলার হাজার হাজার উচ্চ শিক্ষা কাঙ্ক্ষিত ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের লক্ষ্য অর্জনে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিগত সরকারের আমলেও কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রী ও সচেতন মহলের পক্ষ থেকে বারবার দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও, শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া,জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়,ইলেকট্রনিক মিডিয়া সহ নানান মাধ্যেমে প্রচুর লেখালেখি ও আলোচনা হয়েছে,। তবে, শেষ পর্যন্ত কোনো সন্তোষজনক ফলাফল আসেনি।
কক্সবাজারের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ও সচেতন মহলের দাবিগুলো নিম্নরূপঃ
১. স্থানীয় চাহিদা পূরণ:
স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা গুরুত্বপূর্ণ।
২. অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন:
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।
৩. সরকারি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন:
গত কয়েক বছরে সরকারি পর্যায়ে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি।
৪. স্থানীয় আন্দোলন:
২০১৮ সাল কিংবা তারও আগে থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে র্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে দাবি উত্থাপন। যা ২০২১ সালের দিকে এসে আরও বেশি জোরালো হয়ে উঠেছিল।এ নিয়ে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ও স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়েছিল।কিন্তু তখনো সবাই আশাহত হয়েছে।তাই এবার বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আর আশাহত হতে চান না কক্সবাজারবাসী।
৫. গবেষণার সুযোগ:
ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক কারণেও কক্সবাজারের প্রাকৃতিক ও সামুদ্রিক সম্পদ নিয়ে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একটি সময়ের জোরালো দাবি।
৬.নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা:
আঞ্চলিকতার প্রভাবের কারণে নারী শিক্ষার্থীদের জেলার বাইরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সংকীর্ণ হয়ে উঠেছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেক পরিবার মেয়েদের দূরবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা এবং রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে অনিচ্ছুক। এর ফলে, নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে এবং তারা প্রায়শই শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হন। কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে নারী শিক্ষার্থীরা বাড়ির কাছেই নিরাপদ ও মানসম্মত উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে, যা তাদের শিক্ষার পথকে আরও সুগম করবে।
আজ শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সফর করতে যাচ্ছেন। এই সফরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, সচেতন মহল এবং বাসিন্দারা আবারও তাদের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। তাদের প্রাণের দাবি হলো, কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক, যাতে এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।
স্থানীয়রা মনে করেন, এবারই উপযুক্ত সময় বর্তমান সরকারের হাত ধরেই এই দীর্ঘদিনের দাবির সূচনা করা। তারা আশা করছেন, প্রধান উপদেষ্টার সফর এই বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং কক্সবাজারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে শুধু এই জেলারই নয়, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে। এটি অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-